Skip to main content
Last modified on Wednesday, 28 April 2021 09:12

রাজেন্দ্রপুরে সিডিএম-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি স্যার ফজলে হাসান আবেদের ভাষণ

Rate this item
(0 votes)

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
কয়েক মুহূর্ত হলো আমাদের প্রধান অতিথি এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম রাখলেন সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। এই সুযোগে ব্র্যাকের দৃষ্টিকোন থেকে ‘উন্নয়ন' ও 'ব্যবস্থাপনা' শব্দ দুটোকে আমি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করতে চাই।

'উন্নয়ন' হচ্ছে জনগণের কর্মক্ষমতার ফসল। মূলতঃ এটি একটি গণমুখী পদ্ধতি। নিজেদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারী ও পুরুষ যখন একক ও সম্মিলিতভাবে কাজ করেন কেবল তখনই এই উন্নয়ন সংঘটিত হয়। আমরা যে পরিবর্তন চাই তা অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, রাজনৈতিকভাবে ন্যায়প্রদ, সামাজিকভাবে সৎ এবং পরিবেশগতভাবে সুপ্রসু হতে হবে।

মূলধন, সম্পদ এবং অবকাঠামোগত সুবিধা উন্নয়নের অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিছু এগুলো হচ্ছে উন্নয়নের গৌণশর্ত। অভিভাবক যতক্ষণ পর্যন্ত না শিশুদের স্কুলে পাঠান, শিক্ষক যতক্ষণ পাঠদান না করেন এবং ছাত্র পাঠ গ্রহণ না করে ততক্ষণ স্কুল ভবন নির্মাণের কোনো সার্থকতাই প্রতিপন্ন হয়না। গ্রামের রাস্তাটি চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেই রাস্তা চেয়ারম্যানের জামাইকে শ্বশুরবাড়ি যেতে সহায়তা করে মাত্র, যদি না এই রাস্তা কোনো বাজারের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, যেখানে উৎপাদিত সামগ্রীর যথার্থ মূল্য পাওয়ার জন্য কৃষকরা যাতায়াত করতে পারেন যদি না এই রাস্তা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা কৃষিসম্প্রসারণ কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে গ্রামীণ জনগণকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সেবা পেতে সহায়তা করে–তবে এই রাস্তা নির্মাণ কখনই উন্নয়নের পর্যায়ে পড়েনা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, উন্নয়ন মানেই যদি জনগণকৃত ব্যক্তিক ও সামাজিক পরিবর্তনের একগুচ্ছ ফসল– অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, দক্ষতা, ধ্যান ধারণা, সংগঠন ও জীবন-বিধি সংক্রান্ত পরিবর্তন তাহলে একজন উন্নয়ন ব্যবস্থাপকের কাজ কী? তার প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। এই পরিবেশই মানুষকে নিজেদের কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, অবলোকন ও মূল্যায়নে উৎসাহিত করবে।
আমরা বিশ্বাস করি, মূল্যবোধের অংশিদারত্ব উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কতকগুলো মূল্যবোধের সৃষ্টি এবং পরিচর্যার জন্য একটি অবিরাম পদ্ধতির প্রয়োজন। একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধকে একজন ব্যবস্থাপক তার কর্মী এবং জনগণের মাঝে সঞ্চারিত করে দিতে পারেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই সৃজনধর্মিতা ক্রিয়াশীল। তিনি যে সমাজে বাস করেন আপন মর্যাদা অনুযায়ী তিনি সে সমাজে এই মূল্যবোধ চারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

একজন উন্নয়ন ব্যবস্থাপক তার মাঠ কর্মসূচি থেকে অনবরত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তিনি ওই কর্মসূচির অগ্রগতি, ব্যর্থতা, সামর্থ্য এবং দুর্বলতা, জনগোষ্ঠীর ওপর কর্মসূচির প্রভাব অনুধাবন করতে পারেন। তিনি জনগোষ্ঠীর বিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী তার কর্মীদের যোগ্য করে তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে সামাজিক চলিষ্ণুতার বিষয়টি অনুধাবন করতে হয়। কাজের পরিমণ্ডল এবং অপরিহার্যতা বৃদ্ধির স্বার্থের প্রয়োজনে লক্ষ্য পরিবর্তনে তাকে প্রস্তুত থাকতে হয়।

সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আমি সবিনয়ে উল্লেখ করতে চাই উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা মিশনারীদের কার্যক্রম কিংবা কোনো সৌখিন কর্মকাণ্ড নয়। এটি একটি পেশা। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতা, সামর্থ্য এবং মূল্যবোধ। আমরা আশা করি এই কেন্দ্র পেশাগত ক্ষেত্রে উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দিগন্তকে যথার্থভাবে প্রসারিত করবে এবং সময়ের সাথে সাথে এই অঞ্চলের একটি অনুপম কেন্দ্র হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের প্রধান অতিথি জনাব এম. সাইফুর রহমানকে, যিনি এই কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্যে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয়, আমরা আপনার কাছে সত্যি কৃতজ্ঞ।

আমরা আরও ধন্যবাদ জানাই আমাদের বিশেষ অতিথি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে। ধন্যবাদ জানাই বরেণ্য অতিথি যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার জনাব কলিন ইমরে, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জনাব ওলফ সিডারব্লাড, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জনাব এইচ. গ্যাজেনটানকে। তাঁদের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে। আমি এই সুযোগে ধন্যবাদ জানাতে চাই বৃটিশ ওডিএ, নোভিব, নেদারল্যাণ্ড সরকার, সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সি, নোরাড, ডানিডা, জার্মানের ইজেডসই, কানাডার আগাখান ফাউণ্ডেশন এবং ফোর্ড ফাউণ্ডেশনকে। এরা সকলে ব্র্যাকের পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থদাতা– এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র যার একটি অন্যতম অংশ। এদের ফলপ্রসূ সমর্থন ও সহায়তা ব্র্যাককে দারিদ্র্য  দূরীকরণ ও গ্রামীণ বাংলাদেশের উন্নয়নে ক্রিয়াশীল করে রেখেছে।

এ বছর ব্র্যাক তার বিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। এই অনুষ্ঠান সেই উদযাপনের একটি অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে। সুধীবৃন্দ, এই সুন্দর সকালে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সান্নিধ্য দানের জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ
তারিখ : ৮/৫/১৯৯২
রাজেন্দ্রপুর

Read 3380 times Last modified on Wednesday, 28 April 2021 09:12

Join the world’s biggest family

sign-up

Subscribe

STAY INFORMED. Subscribe to our newsletter.

Top